আমাশয় হল পাতলা পায়খানা জনিত এক ধরনের বিশেষ রোগ যার প্রধান কারণ হলো
সংক্রমণ।আমাশয় রোগে ভুগেন নি এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশ অনেক কম। আমাশয় রোগের
লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলে এ রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। আজকের এই
অনুচ্ছেদে আমরা আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
বর্ষাকালের একটি রোগ হিসেবে আমাশয়কে চিহ্নিত করা হয়। বাইরের দূষিত পানি এবং
ময়লাযুক্ত খাবারের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। আমরা বাইরে কি খাচ্ছি বা
কিরকম পানি পান করছি সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আজকের অনুচ্ছেদে আমরা আমাশয়
রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। ঔষধ ছাড়াও আমাশয় রোগের
ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানবো।
পোস্ট সূচিপত্র: আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ভূমিকা
- আমাশয় রোগের কারণ
- আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
- আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- আমাশয় রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ
- আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
- আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি
- শেষ কথা
ভূমিকা
আমাদের দেশের মানুষের বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন
মালের সঙ্গে মিউকাস যাওয়ায় হলো আমাশয়। কিন্তু এ ধারণাটি সঠিক নয়। আমাশয় হল
মূলত জীবাণু ঘটিত এক ধরনের পেটের পীড়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আমাশয় হল
এক ধরনের ডায়রিয়া যেখানে পাতলা পানিযুক্ত মলে রক্ত মিশ্রিত থাকে। আমাশয় রোগের
লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্ভব। এই রোগটি
সাধারণত দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। ঔষধ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া
চিকিৎসার মাধ্যমে আমাশয় রোগটি থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আমাশয় রোগের কারণ
আমাশয় রোগটি সাধারণত জীবাণু এবং পরজীবি দ্বারা হয়ে থাকে। সিগেলা ফ্লেক্সারি
নামক জীবাণু অথবা ক্যাম্পাইলো ব্যাকটার নামক জীবানু হলো আমাশয় রোগের কারণ।
আমাশয় এক ধরনের সংক্রমণ। দূষিত পানি পান করা এবং খাবারের মাধ্যমে এই রোগটি
ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত আমাশয় রোগের জন্য দায়ী জীবাণুগুলো মানুষের অন্ত্রে বসবাস
করে। এরপর এই জীবানু মানুষের মলের মাধ্যমে বাইরে চলে আসে।
জীবাণুগুলো যখন খাবার এবং পানির সংস্পর্শে আসে তখন তা দূষিত করে ফেলে। আমার সাথে
সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী আমাশয়।
স্বল্পমেয়াদি আমাশয় সাত দিনের মধ্যেই সেরে যায় এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই
অনেক সময় ভালো হয়ে যায়। আর দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় সারাতে এক মাসের বেশি সময়ও
লেগে যায়। সেজন্য এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে। রোগীকে সবসময়
পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং লক্ষ্য করতে হবে আমাশয় রোগের কারণ কি, কেন আমাশয়
ভালো হচ্ছে না।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
আমাশয় হলে রোগীর শরীর অনেক সময় দুর্বল হয়ে যায়। তাই রোগীকে খাবার হিসেবে
ডাবের পানি, ভালো ঠান্ডা পানি, চিনির শরবত, ফলের রস ইত্যাদি খেতে হবে। অতিরিক্ত
পাতলা পায়খানা হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। সিগেলা প্রজাতির
জীবাণু দ্বারা আমাশয় হলে ডাক্তারের পরামর্শ মত এন্টিবায়োটিক খেলে রোগ পুরোপুরি
সেরে যাবে। আমাশয় রোগীর খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হল।
আমাশয় রোগীকে যেসব খাবার খেতে হবে
- সাদা ভাত
- চর্বিহীন মাংস
- সাদা রুটি
- মুরগির ঝোল
- কলা
- দই
- ওটস মিল
আমাশয় রোগীকে যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- দুধ বা দুধের তৈরি জিনিস খাওয়া যাবেনা
- প্রচুর তেলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- বাসি পঁচা খাবার খাওয়া যাবেনা
- হোটেলের খাবার খাওয়া যাবেনা
- আঙ্গুর বা কিসমিস খাওয়া যাবে না
আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সাধারণত আমাশয় রোগের উপসর্গগুলো পাঁচ দিন বা তার বেশি সময় থাকতে পারে। আমাশয়
রোগটি গুরুতর হলে ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে। নিচে আমাশয় রোগের লক্ষণগুলো
আলোচনা করা হলো।
- মোচড় দিয়ে পেট ব্যথা হতে পারে
- বারবার মলত্যাগ করা
- মলের সঙ্গে আম বা রক্ত যাওয়া
- পেট ফুলে যেতে পারে
- পেট ফাঁপা হতে পারে
- বমি বমি ভাব হতে পারে
- রক্তাক্ত ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে
এইসব উপসর্গ হলো প্রাথমিক অবস্থায় দেখা দিতে পারে কিন্তু যদি সংক্রমণ বেশি হয়
তাহলে রোগীর আরো কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
- জ্বর সর্দি দেখা দিতে পারে
- পেশীতে খিচুনি ব্যথা দেখা দিতে পারে
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগতে পারে
- দেহের ওজন হ্রাস পেতে পারে
- দেহের শক্তি হ্রাস পেতে পারে
আমাশয় রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা এর প্রতিকার গুলো সম্পর্কে
আলোচনা করব। উপরোক্ত উপসর্গগুলি দেখা দিলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে অতি দ্রুত সুস্থতা লাভ করবেন। আমাশয়
নিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্যই সঠিকভাবে রোগটি নির্ণয় করতে হবে। এরপর চিকিৎসকের
পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত এন্টিবায়োটিক গুলো আমাশয়
রোগের চিকিৎসার ব্যবহৃত হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ঔষধ গ্রহণ করবেন
না। রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল এবং পরিমিত বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।
আমাশয় রোগ প্রতিরোধের উপায়সমূহ
আমাশয় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের জন্য যদি আমরা বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে চলি
তাহলে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। সচেতনতা এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়। চলুন
জেনে নেয়া যাক আমাশয় রোগ প্রতিরোধের কিছু উপায় সমূহ-
- বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং সব ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে
- খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- রান্না করার আগে অবশ্যই হাত ভালো হবে ধুয়ে নিতে হবে
- মলত্যাগের পর বিশুদ্ধ পানি এবং সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুতে হবে
- সবজি খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে
- শিশুদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে হবে
- ব্যবহারিত কাপড়-চোপড় পরিষ্কার পানি এবং ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে
- অসুস্থ শিশুর ডায়পার পরিবর্তনের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাশয় রোগ সারানোর জন্য ঔষধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। এই ঘরোয়া
ট্রিটমেন্টগুলো ব্যবহার করে দ্রুত এ রোগ সারানো সম্ভব হয়। প্রিয় পাঠক চলুন জেনে
নেওয়া যাক আমার সেই রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো।
হলুদ: আমাশয় রোগ সারাতে হলুদের ভূমিকা অতুলনীয়। হলুতে রয়েছে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এন্টিফাঙ্গাল গুনাগুন। গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ শতাংশ
আইবিসের সমস্যা কমে যায় হলুদের মাধ্যমে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত
প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম হলুদ খেতে পারেন।
বেতফল: ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে আরেকটি উপায় হল বেতফল। বেত ফলে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পটাশিয়াম ও পেকটিন। যা আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী।
যাদের দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় রয়েছে তারা নিয়মিত বেতফল খেলে আমাশয় চিরতরে সেরে
যাবে।
আম ও জাম পাতার রস: আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয় আম ও
জাম পাতার রস। আম এবং জাম পাতার রস গরম করে খেলে আমাশয় সেরে যাবে।
ডালিমের খোসা: ডালিমের খোসা আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে
আমাশয় রোগ সেরে যাবে।
তেঁতুল: তেঁতুল আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে আমাশয় রোগ
সেরে যাবে
পুদিনা ও লেবু পানি: পুদিনা ও লেবু পানি আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত
খেলে আমাশয় রোগ সেরে যাবে।
আদা চা: আদা চা আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে আমাশয় রোগ
সেরে যাবে।
থানকুনি পাতা: থানকুনি পাতা আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে
আমাশয় রোগ সেরে যাবে।
কারি পাতা: কারি পাতা আমাশয় রোগের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে আমাশয়
রোগ সেরে যাবে।
আমাশয় রোগের ঔষধ কোনটি
আমাশয় রোগ হলে রোগীর শরীরে অনেক দুর্বল হয়ে যায়। যেহেতু রোগীর শরীর থেকে
প্রচুর পরিমাণে তরল বের হয়ে যায়। তাই রোগীকে বেশি পরিমাণে তরল এবং পুষ্টিকর
খাবার খেতে দিতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। যদি আমাশয়ের মাত্রা বেশি
পরিমাণে দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে না। ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী ট্যাবলেট মেট্রোনিডাজল (৪০০ মিলিগ্রাম) খেতে পারেন। তবে অবশ্যই
এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণ করা যাবে
না।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে
বিস্তারিত জানলাম। আমাশয় রোগের জন্য কোন কোন জীবাণু দায়ী সে সম্পর্কেও
বিস্তারিত জানলাম। তবে এই রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে খুব
সহজেই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। প্রিয় পাঠক এই অনুচ্ছেদে আমরা আরো জানলাম
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো। আমার এই অনুচ্ছেদ করে যদি আপনাদের উপকার হয়
তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ