কিডনি মানবদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি কে বাংলায় বলা হয় বৃক্ক। মূলত
কিডনি আমাদের রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থ পরিশোধন করে এবং মূত্রের মাধ্যমে তা
দেহের বাইরে বের করে দেয়। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে আজকে আমরা
এই অনুচ্ছেদে আলোচনা করব।
কিডনি যখন তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে তখন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।
ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগ এই দুইটি হল নীরব ঘাতক রোগ। যে সকল মানুষের এই দুইটি
রোগের যেকোনো একটি রোগ দেখা দেয় তাদের যন্ত্রণার শেষ থাকে না। কিডনির
কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেলে বা কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে অনেক সময় মানুষের
মৃত্যু নিশ্চিত হয়। তাই আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় গুলো আজকের এই
অনুচ্ছেদ থেকে জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্র: কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় জেনে নিন
- ভূমিকা
- কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
- কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ - কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ
- কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট
- কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়
- নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায় - কিডনি সমস্যার সমাধান
- শেষ কথা
ভূমিকা: কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় জেনে নিন
অনেক সময় কোন উপসর্গ ছাড়াই কিডনি রোগ হতে পারে। কিডনি কখন যে নষ্ট হবে তা
সঠিকভাবে বলা দুষ্কর। কিডনি যেহেতু মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা রক্ত
পরিশোধন করে এবং দূষিত পদার্থ দেহের বাইরে নির্গত করে। তাই কোন কারণে কিডনি
বিকল্প হয়ে গেলে মানব শরীরে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক
সময় কিডনি একেবারে অকার্যকর হয়ে গেলে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। তাই আমরা
কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায়গুলো এই অনুচ্ছেদ থেকে জানবো।
কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
প্রথমদিকে কিডনি সমস্যার কোন লক্ষণ তেমন ভাবে প্রকাশ পায় না। তবে আস্তে আস্তে
কিডনির কার্যকারিতা কমতে থাকলে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। কিডনি সমস্যার কিছু
লক্ষণের মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব,প্রস্রাব লাল হওয়া
এবংদুর্গন্ধযুক্ত হওয়া, তলপেটে এবং কোমরের দুই পাশে প্রচণ্ড ব্যথা করা, প্রসাবের
সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ঘুম কম হওয়া, ক্লান্তিভাব, শরীরে বিভিন্ন অংশে পানি জমে ফুলে
যাওয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে কিডনি সমস্যা হয়েছে। যদি অনেকদিন
চিকিৎসার পরেও কিডনি সমস্যা ভালো না হয় তাহলে বুঝতে হবে দীর্ঘস্থায় কিডনি রোগ
হয়েছে। আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদে জানবো আমাদের কিডনি ভালো আছে কিনা তা বোঝার উপায়
সমূহ।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ - কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ
প্রথম অবস্থাতে কিডনি ড্যামেজ বা ইনফেকশনের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আস্তে
আস্তে কিডনির কার্যকারিতা করতে থাকলে ঠিক তখনই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। প্রিয়
পাঠক, চলুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি ড্যামেজের বা কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণসমূহ।
- শরীর ফুলে যাওয়া বিশেষ করে মুখমন্ডল ফুলে যায়।
- প্রস্রাবের সাথে যদি রক্ত যায় বা প্রস্রাব যদি লাল হয়।
- উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে।
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করলে।
- ওজন কমে গেলে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হলে।
- শরীরে ক্লান্তিভাব আসলে।
- প্রস্তাবের পরিমাণ কমে গেলে।
- কোমরের দুই পাশে এবং তলপেটে ব্যথা করলে।
- সব সময় শীত শীত লাগলে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে কিডনি রোগ বা কিডনি ইনফেকশন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন রোগ রয়েছে যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘদিন ব্যাথা
ওষুধ খেলে,বংশে কারো কিডনি সমস্যা থাকলে তাকে অবশ্যই কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে।
কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট
কারো যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে বা কারো বংশে যদি কিডনি সমস্যার
রোগী থাকে তাকে অন্তত দুটি পরীক্ষা করানো উচিত। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন বলেছে এ
সি আর (ACR) এবং জি এফ আর (GFR) এই দুইটি টেস্ট করালেই কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝা
যাবে।
এ সি আর (ACR) টেস্ট বা মূত্র পরীক্ষা: এ সি আর (ACR) টেস্ট হলো
অ্যালবুমিন ও ক্রিয়েটিনিন এর অনুপাতের পরীক্ষা। অ্যালবুমিন হল এক ধরনের প্রোটিন
যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই প্রোটিন রক্তে থাকা জরুরী কিন্তু কোন
কারনে প্রস্রাবে অ্যালবুমিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে বুঝতে হবে কিডনি সঠিকভাবে রক্ত
পরিশোধন করতে পারছে না। তাই মূত্র পরীক্ষায় প্রোটিন পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়ার
জন্য তার NFR করাতে হবে।
জি এফ আর (GFR) টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষা: জি এফ আর (GFR) টেস্ট টেস্ট হলো
রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর পরীক্ষা। রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন নামক বর্জ্য পদার্থ
অপসারণে ব্যর্থ হলে বুঝতে হবে কিডনি সমস্যা হয়েছে। প্রথমে রক্তের ক্রিয়েটিনিন
পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং পরবর্তীতে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (GFR) পরীক্ষা
করে দেখতে হবে। এই টেস্ট গুলো দেখে চিকিৎসক বুঝতে পারবেন কিডনি সমস্যা হয়েছে
কিনা। এই টেস্টগুলো করানোর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার কিডনি কেমন আছে।
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়
সাধারণত কিডনি সমস্যা হলে তেমন কোন লক্ষণ প্রথমে প্রকাশ পায় না। পরবর্তীতে যখন
কিডনি অকার্যকর হয়ে যায় তখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কিডনি সমস্যা হলে
কোমরের দুই পাশে এবং তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা স্থির থাকেনা এবং সব সময়
অস্বস্তি বোধ হয়। তবে কিডনি সমস্যার মূল লক্ষণ কিন্তু ব্যথা নয়। শরীরের বিভিন্ন
অংশে পানি জমা, ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা এবং বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো
দেখা দিলে বুঝতে হবে কিডনি সমস্যা হয়েছে। দেখা যায়
নষ্ট কিডনি ভালো করার উপায়-কিডনি সমস্যার সমাধান
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি সমস্যা দেখা দেয়। তাই যারা
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিডনি সমস্যা সমাধানে কি কি করণীয় চলুন জেনে নেওয়া যাক। কিডনি সমস্যা সমাধানে
করণীয়-
- নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
- ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- শরীরের ওজন কমাতে হবে।
- শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
- রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ফলমূল খাওয়া যাবেনা।
- কিডনি রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে এবং প্রয়োজনে রুটিন চেকআপ করাতে হবে।
যেহেতু কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলো সহজে বোঝা যায় না তাই কিডনি সমসাকে নীরব ঘাতক
বলা হয়। কিডনি সমস্যা দেখা দিলে এর সাথে সাথে অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই কিডনি সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এই অনুচ্ছেদে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম কিডনি ভালো আছে কিনা
বোঝার উপায় সমূহ,কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ,কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট,কিডনির সমস্যা হলে
কোথায় কোথায় ব্যথা হয়,কিডনি সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয় সমূহ। যেহেতু কিডনি
সমস্যা কে বলা হয় নীরব ঘাতক রোগ তাই এই সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত একজন
ভালো নেফ্রলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করুন। প্রিয় পাঠক আজকের এই অনুচ্ছেদটি পড়ে
যদি আপনারা উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করবেন।