বিশ্বজুড়ে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এর প্রধান কারণ হলো
জীবনযাত্রার অনিয়ম, নিয়মিত ব্যায়াম না করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এই
রোগের জন্য দায়ী। ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে আজকে আমরা
বিস্তারিত জানবো।
বাংলাদেশের প্রায় ৯৭% মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস সাধারণত
টাইপ-১ এবং টাইপ-২ এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের টাইপ-২
ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-২ ডায়বেটিস সহজেই নিরাময় করা সম্ভব হয়। কিছু নিয়ম
কানুন মেনে চললেই টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে থাকে। তখন আর
রোগীকে ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার
খাওয়া এবং জীবনযাত্রায় নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদে জানবো ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস
কমানোর উপায়। ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায়সমূহ নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করা হল।
পোস্ট সূচিপত্র: ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- ভূমিকা
- ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
- ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
- খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
- কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে
- কি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
- শেষ কথা
ভূমিকা: ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বিশ্বজুড়ে এক মরণ ঘাতকের নাম ডায়াবেটিস। তবে বেশিরভাগ মানুষই টাইপ-২
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যখন
কারো ডায়াবেটিস হয় তখন তার শরীরে ইনসুলিন নিশ্রিত হওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের কিডনি, লিভার এবং হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তবে
টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী কাজ করলে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
প্রতিদিনের অস্বাস্থ্যকর খাবার, চিনি এবং অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড বাড়িয়ে দিতে পারে
ডাইবেটিস। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাদ্য যুক্ত করতে হবে যেগুলো
ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। প্রিয় পাঠক চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক
ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায়। যে সকল খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
থাকবে তা হল-
করলা: করলা ডায়াবেটিস কমাতে একটি ঘরোয়া উপায়। করলাতে রয়েছে ইনসুলিন
পলিপেপটাইড-পি এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
তাই প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করলার জুস খাওয়া উচিত তাহলে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রনে থাকবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন অন্তত একবার করলার তরকারি
খাবেন।
মেথি: মেথি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য
করে। নিয়মিত মেথি খেলে টাইপ-১ এবং টাইপ-২ দুই ধরনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
থাকে। তাই ঔষধ ছাড়া ডায়াবেটিস কমানোর উপায় হিসেবে নিয়মিত মেথি খেতে পারেন।
প্রতিদিন ২ চা চামচ মেথি রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান করুন। সম্ভব হলে
প্রতিদিন মেথি গুঁড়া ঘরোয়া উপায় হিসেবে খেতে পারেন।
ডুমুর: ডুমুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। গবেষণায় দেখা
গেছে ডুমরে রয়েছে হাইপোগ্লায়সেমিক উপাদান যা ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
তাই নিয়মিত খাবারে ডুমুরের তরকারি রাখতে পারেন। গবেষকরা আরো বলেন ডুমুরের পাতা
ইনসুলিন প্রতিরোধে উন্নত উপায় হিসেবে কাজ করে।
চিয়া সিডস: চিয়া সিডস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ভূমিকা পালন করে। এটি ওজন
কমাতেও সহায়তা করে। নিয়মিত চিয়া সিডস খেলে রক্তে শর্করা পরিমাণ হ্রাস পায় এবং
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।
চর্বিযুক্ত মাছ: চর্বিযুক্ত মাছ খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বিভিন্ন ধরনের চর্বিযুক্ত মাছ রয়েছে তার মধ্যে সালমান অন্যতম। এইসব চর্বিযুক্ত
মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ওজন কমাতেও এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
সহায়তা করে।
শাকসবজি: শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং ফাইবার রক্তের
শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা। তাই যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা
নিয়মিত শাকসবজি খাবেন।
৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
দিন দিন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যারা দীর্ঘদিন যাবত ওষুধ
খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন তাদের জন্য রয়েছে সুখবর। ঔষধ ছাড়া নিয়মিত
ব্যায়াম এবং অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব। ডায়াবেটিস কোন প্রাণঘাতী রোগ নয়। আমাদের দেশের মানুষেরা ডায়াবেটিস এর
জন্য ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ছেন।
দীর্ঘদিন ঔষধ ব্যবহার করার কারণে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত ব্যায়াম এবং মেডিটেশন এর মাধ্যমে সহজেই
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
এমনটাই দাবি করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার পরিচালক
ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা।
খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
সকালের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব জরুরী। কারণ সকালের খাবার সারাদিনের
শক্তি যোগায়। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীরা খালি পেটে কিছু খাবার খেলে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে ডায়াবেটিস কমানোর কিছু উপায়
সমূহ।
মেথি ভিজানো পানি: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রাতে পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে
সেই পানি সকালে মেথি সহ পান করতে হবে। মেথি ভিজানো পানি এবং মেথি বীজ চিবিয়ে
খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তাই রাতে এক গ্লাস পানির মধ্যে এক চা চামচ
মেথি ভিজিয়ে সকালে পান করুন। এতে আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ঘি ও হলুদের মিশ্রণ: এক চা চামচ ঘি এর সাথে হলুদ মিশ্রিত করে খেয়ে ফেলুন।
এতে আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ ঘি খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি
চাহিদা কমে এবং হল শরীরের জন্য উপকারী।
প্রোটিনযুক্ত খাবার: ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে পানিতে ভিজানো বাদাম এবং
আখরোট ইত্যাদি খেতে পারেন কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। সকালে খালি
পেটে ডায়াবেটিস রোগীদের সুগার কমে গেলে এই প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো খেতে পারেন।
দারুচিনি মিশ্রিত পানি: দারুচিনি একটি মসলা যা রক্তের সুগার কমাতে অনেকটা
সাহায্য করে। রাতে বাড়িতে দারুচিনি ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে সেই পানি খেয়ে
ফেলুন। এতে আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সাথে সাথে ডায়াবেটিস কমে যাবে।
ভিনেগার ও লেবুর রসের মিশ্রণ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভিনেগার এবং লেবুর
রসের মিশ্রণ অনেক উপকারী। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার
এবং লেবুর মিশ্রণ।
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা সকলের ভিন্ন। কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে
এবং কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে তা অবশ্যই জানা দরকার।
ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাদ্য তালিকা থেকে দূরে রাখায়
ভালো। এসব খাবার এড়িয়ে চললেই ডায়াবেটিস রোগীরা সুস্থ থাকবেন। চলুন জেনে নেওয়া
যাক কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
- চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়তে পারে। তাই চেষ্টা করবেন নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে চিনি বা চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
- শর্করা যুক্ত খাবার যেমন ভাত রুটি ইত্যাদি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- সাদা আটা বা চাল পরিহার করা ভালো। কারণ এটি ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দেয়। তাই সাদা আটা বা চাল এর পরিবর্তে লাল আটা বা চাল ব্যবহার করুন।
- চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করুন যেহেতু ডায়াবেটিস হলে রক্ত এবং যকৃতে চর্বি পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়
- তামাক অ্যালকোহল ধূমপান বর্জন করুন কারণ এগুলো ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
কি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে বড় উপায় হলো খাদ্যাভাসে পরিবর্তন। সঠিক
খাদ্যাভাস গড়ে তুললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এমন কিছু খাবার আছে
যেগুলো আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি খেলে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সবুজ শাকসবজি: টমেটো শসা বেগুন মাশরুম এবং সবুজ শাকসবজি নিয়মিত খান। কারণ
সবুজ শাকসবজিতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কম রয়েছে। তাই সবুজ শাকসবজি খেলে আপনার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
চিনি ছাড়া চা পান করুন: যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তারা অবশ্যই চিনি
ছাড়া চা পান করুন। এতে করে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
মাছ: গবেষণায় দেখা গেছে মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা রক্তে
সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই নিয়মিত খাবারে মাছ রাখুন এতে করে
আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
টক দই: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে টক দইয়ের ভূমিকা রয়েছে। যেহেতু টক দই
চিনির পরিমাণ কম তাই এটি আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে না। তাই
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে টকটাই খেতে পারেন।
বাদাম: গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাদাম খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২১
শতাংশ কমে যায়। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বাদাম রাখুন। অন্যদিকে বাদাম
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
লেবু: লেবু এবং লেবু জাতীয় ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খাওয়া
ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত লেবু খেতে পারেন।
ডিমের সাদা অংশ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডিমের সাদা অংশ অনেক উপকারী। এতে
প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কম থাকে। তাই এটি
ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সহায়তা করে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদে ওষুধ ছাড়া কিভাবে ডায়াবেটিস কমানো যায় সে
সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। ডায়াবেটিস সাধারণত বংশগতভাবে হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী
বেশিরভাগ মানুষই টাইপ -২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক খাদ্য
গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এই অনুচ্ছেদে আমরা বিস্তারিতভাবে ঔষধ ছাড়া কিভাবে ডায়াবেটিস কমানো যায় সেটা
নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রিয় পাঠক অনুচ্ছেদটি পড়ে যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে
আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ